কলমটাকে বেশ কিছুদিন বিশ্রামে পাঠিয়েছিলাম। কলম বলে কি একটু ল্যাদ খাবার অধিকার নেই! কলম বিশ্রাম কাটিয়ে ফিরেই দাবী করলো "একটা অন্যরকম প্রেমের গল্প লিখতে হবে।" কলমের দাবী অগ্রাহ্য করবো সেই সাহস নেই। তাই শুরু করলাম অন্যরকম প্রেমের গল্প..... প্রেম ভালোবাসা থেকে বিশ্বাস উঠে যাওয়া মেঘ নিজের জীবনটা বেশ ভালোই কাটাচ্ছিল নিজের মতো করে, কোনো সম্পর্কে না থেকে। বেশ স্বাধীন জীবন, যেখানে নিয়ম করে কাওকে সুপ্রভাত বা শুভরাত্রি বলার দৈনন্দিন ঝামেলা নেই। বাঁধাগত ছকে খেয়েছ, স্নান করেছ, ঘুমিয়েছো ইত্যাদি ইত্যাদি জানতে চেয়ে কাওকে কতটা ভালোবাসে তা জাহির করার মিথ্যে অভিনয় ও নেই। এরকমই একটা সময় একদিন দেখলো একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট ফেসবুকে। একটা অচেনা মেয়ে, যার আবার প্রোফাইলে কোনো ছবি নেই। প্রোফাইলে গিয়ে সেরম কিছুই বুঝতে পারলো না মেঘ। শুধু বুঝলো মেয়েটা অনেক দূরের বাসিন্দা আর মেয়েটার নাম বৃষ্টি। সাতপাঁচ ভেবে রিকোয়েস্টটা একসেপ্ট করেই নিল। এরপর বেশ কিছুদিন কেটে গেল। মেঘ ভুলেই গেছিলো ব্যাপারটা। হটাৎ একদিন মেসেজ এলো, " কি করছ, কেমন আছো"? কি বলবে ভাবতে গিয়ে মেঘ প্রথমেই বলে বসলো অচেনা মানুষ কে হটাৎ বন্ধু বানাতে চাওয়ার কি কারণ? বৃষ্টি বলল এমনি ইচ্ছে হলো তাই। এভাবেই শুরু হলো দুটো অচেনা নারী পুরুষের কথপোকথন। প্রাথমিক কথাবার্তা থেকে মেঘ জানতে পারে বৃষ্টির নিজের বলতে কেও নেই। পরপর ঘটে যাওয়া কিছু দুর্ঘটনায় বৃষ্টি বাবা, মা, দাদা সবাইকে হারিয়েছে। আর বৃষ্টি নিজেও দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছে। মেঘ যতই বৃষ্টিকে দেখতে থাকে, ততই অবাক হয়। একটা মানুষ সব হারিয়েও, নিজে মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়েও কি করে এত ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে হাসিমুখে দিনকাটাতে পারে, এর উত্তর মেঘ খুঁজে পায়না। সময় এগোতে থাকে, তার সাথে দুজনের বন্ধুত্বও। দেখতে দেখতে দোল এসে যায়। সকাল থেকেই মেঘ মন খারাপ করে বাড়িতে শুয়ে গান শুনছিলো। কয়েক বছর আগে জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা মেঘের জীবনটাকে এলোমেলো করে দিয়েছিলো। তার রেশ কিছুটা হলেও থেকে গেছিলো। মন খারাপ করা সকালে হটাৎ মেসেঞ্জারে আসা একটা ভিডিও দেখে অবাক হলো, আর তার সাথে একরাশ মুগ্ধতা আর অনেকটা খুশি। দেখলো বৃষ্টি দোল উপলক্ষে খুড়তুতো ভাইবোনদের সাথে পাঞ্জাবি গানের সাথে তাল মিলিয়ে মনপ্রাণ খুলে নাচছে। সঙ্গে সঙ্গে মেঘ বৃষ্টিকে দোলের একরাশ শুভেচ্ছা জানালো। এরকম ভাবেই বেশ কিছুদিন কাটলো। সময়ের সাথে বৃষ্টির সাথে মেঘের কথা বলাও আস্তে আস্তে বাড়ছিল। সারাদিনে কথা বলার সময় নাহলেও রাতে ঘুমানোর আগে ঠিকই দুজনের অনেক কথা গল্প হতে থাকলো। যত দিন এগোচ্ছিল মেঘ বুঝতে পারছিল তার নেতিবাচক চিন্তাভাবনাগুলো কিভাবে যেন আস্তে আস্তে ইতিবাচক হয়ে উঠছিল। যখনই কোনো কারণে মেঘকে হতাশা গ্রাস করতো, মেঘের চোখের সামনে বৃষ্টির হাসি মুখের ছবিটা ভেসে উঠতো, আর মেঘ আবার মনোবল ফিরে পেত এটা ভেবে যে বৃষ্টি যদি এত কষ্ট নিয়েও হাসি মুখে বাঁচতে পারে, সে কেন পারবেনা। মেঘ নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো, " বৃষ্টিই কি এর কারণ?" আর ভেতর থেকে উত্তর ও এলো হাঁ। মেঘ বুঝতেই পারছিল বৃষ্টির প্রতি তার আগ্রহ সময়ের সাথে সাথে তীব্রভাবে বাড়ছিল। কিন্তু এটা বুঝতে পারছিলো না যে এটা ভালোলাগা না ভালোবাসা! অনেক ভাবনাচিন্তা করে মেঘ একদিন রাতে বৃষ্টি কে বলেই দিলো, যে সে বৃষ্টি কে ভালোবেসে ফেলেছে। কথাটা শুনে বৃষ্টি কিছুক্ষনের জন্য চুপ করে গেল। তারপর বললো এটা কি করে সম্ভব। বৃষ্টি বললো মেঘ দেখো আমরা কেউ কাউকে সামনে থেকে দেখিনি। আমরা কোনোদিন ফোনে পর্যন্ত কথা বলিনি। আমাদের যোগাযোগের মাধ্যম শুধু ফেসবুক মেসেঞ্জার। তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ আমি আদৌ কোনোদিন সুস্থ হয়ে উঠতে পারবো কিনা জানিনা। হয়তো খুব বেশিদিন পৃথিবীর আলো আমি আর দেখতে পাবোনা। এই জায়গাতে দাঁড়িয়ে শুধু নিজের কথা ভেবে স্বার্থপরের মতো তোমাকে হাঁ বলতে পারবো না। আর আমার মনে হয় আমার জন্য তোমার মনে যা হচ্ছে, সেটা ভালোবাসার থেকে সহানুভূতি বেশি। সব শুনে মেঘ কিছুক্ষনের জন্য চুপ করে থাকলো। তারপর বলল আর তুমি যদি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাও, তখনো কি তোমার উত্তর না হবে, নাকি বদলে যাবে। আর সহানুভূতি না ভালোবাসা সেটা সময়ই নাহয় ঠিক করে দেবে। আর দেখো ফোনে কথা বলা, বা দেখা করাটাই একটা সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করিনা। দিনের পর দিন দেখা করে, রাতের পর রাত জেগে কথা বলেও অনেক সম্পর্ক চোখের জলে শেষ হয়। তাই আমি অনেকভেবেই তোমাকে সব বলেছি। সবকিছু শোনার পর বৃষ্টি বলল সুস্থ মানুষের সাথে কথার যুদ্ধে জেতা যায়, কিন্তু পাগলের সাথে তো কথার লড়াইতে কেও জিততে পারেনা। ঠিক আছে, আমি কথা দিলাম আমি যদি কোনোদিন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠি তাহলে আমি তোমারই হবো। আসলে কি জানো মেঘ, আমি কোনোদিন ভাবতে পারিনি আমার মতো অসুস্থ একটা মেয়েকেও কেও ভালোবাসতে পারে, তাও আবার সামনাসামনি কোনোদিন না দেখে, ফোনে কথা না বলে। যেখানে অন্য ছেলেরা কথা শুরু হতেই ফোনে নম্বর চায়, সেখানে তুমি নিজে বারণ করেছ নম্বর এর জন্য। বারবার বিরক্ত করোনি কথা বলার জন্য কখনো। রাতে অনেকক্ষন কথা বললেও কখনো কুরুচিকর কথা বলোনি, তোমার সীমা কখনো অতিক্রম করোনি। আমি অস্বীকার করবো না, আমিও তোমাকে পছন্দ করি। কারণ জীবনসঙ্গী হিসেবে যেমন মানুষ সবসময় চেয়েছি, তুমি ঠিক সেরকম একটা মানুষ। কিন্তু কোথাও গিয়ে মনে হয়েছে আমার মতো মানুষের জন্য ভালোবাসা নয়। কারণ আমি নিজেই জানিনা আমার ভবিষ্যৎ কি? আর সত্যি বলতে বাঁচার ইচ্ছেটাও চলে গেছিলো। কিন্তু আজ তোমার কথাগুলো শুনে, আবার জীবনকে নতুন করে দেখতে ইচ্ছে করছে। আমাকেও কেও ভালোবাসতে পারে এ6টা ভেবেই আজ খুব ভালো লাগছে। বৃষ্টির থেকে এই আংশিক হাঁ শুনে মেঘ ভীষণ খুশিতে বলে উঠলো তোমার সুস্থ হওয়াটা তো শুধু সময়ের অপেক্ষা। তোমাকে আমার হওয়া থেকে সময় ও আটকাতে পারবেনা। এটা শুনে বৃষ্টিও অনেকদিন পর মন খুলে হেসে উঠলো। এভাবেই শুরু হলো একটা অন্যরকম মন ভালো করা প্রেমের গল্প। কখনো মেঘ আনন্দে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়তে থাকলো, আর কখনো বৃষ্টি খুশিতে মেঘ হয়ে উঠলো। আর গল্পের শেষটা কি হলো, বৃষ্টি মেঘের হলো কিনা সেটা নাহয় গল্পের পরবর্তী অধ্যায়ের জন্য তোলা রইলো.............. #ন#হন্যতে